ব্ল্যাক হোল কি ? ব্ল্যাক হোল কেনো রহস্যময়?

মহাবিশ্বের রহস্যময় স্থান:ব্ল্যাক হোল

 

ভাবুন তো, আপনি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছেন। দূরে অসংখ্য তারার আলো ঝলমল করছে। কিন্তু জানেন কি, সেই তারাদের মাঝেও এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে আলো পর্যন্ত যেতে পারে না? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন , আমি বলছি ব্ল্যাক হোলের কথা । বিজ্ঞানের এই বিস্ময়কর আবিষ্কার আমাদের মহাবিশ্বের সবচেয়ে রহস্যময় জিনিসগুলোর একটি।

Image of black hole

ব্ল্যাক হোল কী?

ব্ল্যাক হোল এমন একটি জায়গা যেখানে মাধ্যাকর্ষণ শক্তি এতটাই বেশি যে কোনো কিছুই এখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না এমনকি আলোও না। এজন্যই আমরা ব্ল্যাক হোলকে দেখতে পাই না। আমরা কেবল তার প্রভাব বুঝতে পারি তার আশেপাশের বস্তুগুলো কেমন আচরণ করছে, সেটার মাধ্যমে।

ব্ল্যাক হোল কিভাবে তৈরি হয়?

ব্ল্যাক হোল সাধারণত তৈরী হয় যখন খুব বড় একটি তারা তার জীবন শেষ করে বিস্ফোরনের মাধ্যমে ধ্বংস হয় তখন। একটি তারা যখন সমস্ত ফুয়েল (যেমন হাইড্রোজেন) পুড়িয়ে ফেলে, তখন সে আর নিজের ওজন সামলাতে পারে না। তখন সে নিজের মাধ্যাকর্ষণে ভেঙে পড়ে এবং ক্রমশ সংকুচিত হতে থাকে ।সংকুচিত হতে হতে এক সময় একটা অনন্ত ঘনত্বের বিন্দুতে পৌঁছে যায়। একেই বলে “সিঙ্গুলারিটি”। সিঙ্গুলারিটি হলো ব্ল্যাক হোলের কেন্দ্র। এর চারপাশে থাকে “ইভেন্ট হরাইজন” । এটি হলো সেই সীমা যার ভেতরে একবার গেলে আর বাইরে ফেরা যায় না।

ব্ল্যাক হোল কয় প্রকার ও কি কি?

বিজ্ঞানীরা কয়েক ধরণের ব্ল্যাক হোল শনাক্ত করেছেন:

 

1. স্টেলার-ম্যাস ব্ল্যাক হোল: সাধারণ তারাগুলোর ধ্বংসের ফলে তৈরি হয়।

2. সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাক হোল: এগুলো গ্যালাক্সির কেন্দ্রে থাকে। যেমন আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির মাঝখানে একটি বিশাল ব্ল্যাক হোল আছে , যার নাম “স্যাজিটারিয়াস A*”।

3. মিডল-ম্যাস ব্ল্যাক হোল: মাঝারি আকারের ব্ল্যাক হোল, যেগুলোর অস্তিত্ব নিয়ে গবেষণা চলছে।

4. প্রাইমর্ডিয়াল ব্ল্যাক হোল: ধারণা করা হয়, মহাবিশ্বের শুরুতে তৈরি হয়েছিল। তবে এখনো এদের অস্তিত্ব নিশ্চিত নয়।

ব্ল্যাক হোল কি সবকিছু গিলে ফেলে?

এই প্রশ্নটা আমরা প্রায়ই শুনি: “ব্ল্যাক হোল কি সবকিছু গিলে খায়?” উত্তর হলো — না, ব্ল্যাক হোল গিলে খায় না, বরং সে তার আশপাশে প্রবল মাধ্যাকর্ষণ বল প্রয়োগ করে। যদি কোনো বস্তু ব্ল্যাক হোলের খুব কাছ দিয়ে চলে যায়, তাহলে সেটি ধীরে ধীরে তার দিকে টানতে থাকে। তবে যদি সেই বস্তুটি ইভেন্ট হরাইজনের বাইরে থাকে, তবে তার রক্ষা পাওয়ার সুযোগ আছে।

ব্ল্যাক হোল কি সময় ও স্থানের ওপর প্রভাব ফেলে?

হ্যাঁ, ব্ল্যাক হোল কেবল বস্তু নয়, সময় ও স্থানকেও বাঁকিয়ে ফেলে। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুযায়ী, বড় কিছু যতই ভারী হয়, সে তত বেশি স্পেস-টাইমকে বাঁকিয়ে দেয়। ব্ল্যাক হোল এতটাই ভারী ও ঘন যে, ব্ল্যাক হোল সময়ের গতিকেও ধীর করে দেয়। একজন পর্যবেক্ষক যদি ব্ল্যাক হোলের কাছে যায়, তার জন্য সময় ধীরে চলে — যা আমরা “টাইম ডাইলেশন” বলি জানি।

হকিং রেডিয়েশন: ব্ল্যাক হোলের কি মৃত্যু হয় ?

আমরা ভাবি ব্ল্যাক হোল চিরজীবী। কিন্তু বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং দেখিয়েছেন, ব্ল্যাক হোলও ধীরে ধীরে বিকিরণ (radiation) ছড়ায় ।এই বিকিরণকে বলা হয় “হকিং রেডিয়েশন”। এভাবে বিকিরণ ছড়াতে ছড়াতে বিলিয়ন বিলিয়ন বছর পর, একটি ব্ল্যাক হোলও সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যেতে পারে।

ব্ল্যাক হোলের অস্তিত্ব

যেহেতু ব্ল্যাক হোলের নিজস্ব আলো নেই , তাই একে সরাসরি দেখা যায় না। কিন্তু আমরা তার আশেপাশের বস্তুর গতিবিধি দেখে অনুমান করতে পারি কোথায় ব্ল্যাক হোল আছে। ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানীরা একটি ব্ল্যাক হোলের “ছবি” তুলতে পেরেছিল ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ ব্যবহার করে। এটি ছিল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।

ব্ল্যাক হোলের মধ্যে পরে গেলে কি হবে ?

এই প্রশ্নটা যেন কল্পবিজ্ঞানের মতো , কিন্তু বিজ্ঞান বলছে, আপনি যদি কোনোভাবে একটি ব্ল্যাক হোলের মধ্যে পড়ে যান, তাহলে আপনার শরীর টেনে একদম সরু সুতো মতো হয়ে যাবে। বিজ্ঞানীরা একে বলেন “স্প্যাগেটিফিকেশন”। তবে এটুকু বলতে পারি, আপনি সেটা বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ হয়ে যাবে।

ব্ল্যাক হোল কি ওয়ার্মহোলের মতো কাজ করতে পারে?

অনেক বিজ্ঞান কল্পকাহিনী বা সিনেমায় দেখা যায়, ব্ল্যাক হোল আসলে একটি ওয়ার্মহোল — অর্থাৎ এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার শর্টকাট পথ। তত্ত্বগতভাবে এটি সম্ভব, তবে এখন পর্যন্ত তার কোনো প্রমাণ নেই। যদি কখনো এমন প্রযুক্তি আসে, তবে হয়তো আমরা এক গ্যালাক্সি থেকে আরেকটিতে মিনিটেই পৌঁছাতে পারব!

 মানুষ কেন ব্ল্যাক হোল সম্পর্কে কৌতুহলী?

ব্ল্যাক হোল এমন একটি বিষয় যা বিজ্ঞানের নানা শাখাকে একসাথে নিয়ে আসে — পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, গণিত এমনকি দর্শন। এটি এমন একটি সীমান্ত যেখানে আমাদের বিজ্ঞানের অনেক প্রশ্ন থেমে যায়। কী হয় সিঙ্গুলারিটির ভেতরে? ব্ল্যাক হোল কি তথ্য ধ্বংস করে দেয়? এসব প্রশ্ন আজও বিজ্ঞানীদের ভাবিয়ে তোলে।

শেষ কথা:

মহাকাশ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জানার আগ্রহকে আরো বাড়িয়ে দেয় ব্ল্যাক হোল । প্রসারিত করে আমাদের কল্পনা শক্তিকে। এটি সুযোগ করে দেয় এমন কিছে জানার যা আমাদের অস্তিত্ব, সময়, ও মহাবিশ্বের প্রকৃতি নিয়ে ভাবতে বাধ্য করে। হয়তো একদিন আমরা ব্ল্যাক হোলের রহস্য পুরোপুরি উন্মোচন করতে পারব, কিন্তু ততদিন পর্যন্ত এটি আমাদের বিস্ময় জাগানোর মাধ্যম হয়ে থাকুক।মহাকাশ ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে আ

রও জানতে সঙ্গেই থাকুন আমার ফেসবুক পেজ Rayhan Quest এর ও বিস্তারিত ভিডিও দেখুন আমার ইউটিউব চ্যানেল  Rayhan Questএ।